খড়গপুরে নেশায় বুঁদ নয়া প্রজন্ম, হুঁশ নেই রেল পুলিশের
জঙ্গলমহল বার্তা,খড়গপুর: প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি নেশার দ্রব্য ব্যবসায় কিভাবে জড়িয়ে পড়ছে কচিকাঁচারা সেই তথ্য আগেই উঠে এসেছিল। তবে এইবারের তথ্য আরও ভয়ঙ্কর। সমীক্ষা বলছে, খড়্গপুরের (Khargapur) মত স্টেশন চত্বরে ১২-১৪ বছর বয়সি কিশোররা ডেনড্রাইট-এর মতো মারাত্মক নেশায় আসক্ত। লোক চক্ষুর আড়ালে নয়; দিনের আলোতে টিকিট কাউন্টারের সামনে দলবেঁধে ডেনড্রাইট নেশায় মত্ত হচ্ছে তারা। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় (Camera) ধরা পড়েছে সেই ছবি (Photo)। ক্যামেরাা(Camera) দেখেই পালানোর চেষ্টা করে কচিকাঁচাগুলো। ব্যস্ততম স্টেশন চত্বর হয়ে উঠেছে কচিকাচাদের নেশার ঠেক, স্টেশনের চারিপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ডেনড্রাইট টানার কাপড়। দিনের আলোতে দিনের-পর-দিন এই ঘটনা ঘটলেও রেল (Rail) পুলিশ এর দেখা নেই। যাত্রী তরফে উঠছে নানান প্রশ্ন। টিকিট কাটতে এসে নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন যাত্রী রা। ডেনড্রাইটের বিকট গন্ধে অতিষ্ঠ যাত্রী গণ। করোনা কালে মাস্ক ভেদ করে নাকে গন্ধ লাগছে বলে অভিযোগ তুলছেন যাত্রীরা। রাজ্যে (West Bengal) বন্ধ লোকাল রেল চলাচল। তাই খুব বেশি ভিড় নেই ব্যস্ত স্টেশনে। তাই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ডেনড্রাইটএর ব্যবসা। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই নেশার দ্রব্য। আর এই মারাত্মক নেশায় প্রাপ্ত বয়স্করা তো বটেই, ছোট ছোট শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ছে ।
MORE NEWS: এক নজরে পশ্চিম মেদিনীপুর
তবু হুঁশ নেই রেল পুলিশের (POLICE)। সাময়িক আনন্দ লাভের আশায় নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা নেশায় আসক্ত হয়ে ওঠে আর ধীরে ধীরে তাদের নিজের জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। নেশার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ক্ষতিকর দিকের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই সমস্ত ডেনড্রাইট জাতীয় নেশার দ্রব্য যদি শরীরে একবার প্রবেশ করে তাহলে তা বার বার গ্রহণের তীব্র ইচ্ছা মানুষকে দিশেহারা করে দেয়। সেখান থেকে জন্ম নেয় অপরাধ প্রবণতা। নিয়মিত মাদক সেবনের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তা জোগাড়ের জন্য নেশা আসক্ত ব্যক্তি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই করতেও দ্বিধাবোধ করে না। সর্বনেশে নেশা ব্যক্তির পুরো স্নায়ু তন্ত্রকেই বিকল করে দেয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। শারীরিক ও আচরণগত ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। খিদে কমে যায়, ফলে দ্রুত ওজন কমতে থাকে। ঘুমের স্বাভাবিক সময়সীমা পরিবর্তিত হয়ে যায়।
নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, চোখের মনির স্বাভাবিক আকারে পরিবর্তন আসে আর চোখ সবসময় লাল হয়ে থাকে। মাদকাসক্ত ছাত্র ছাত্রীরা স্কুল- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত যেতে চায় না; নেশায় আসক্ত চাকুরী জীবীরাও কর্মক্ষেত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তারা পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে নিত্য নতুন নেশার ঠেকে নতুন নতুন বন্ধুত্বের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস সংক্রান্ত নানা জটিল রোগ এদের নিত্যসঙ্গী। তবে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। এক্ষেত্রে প্রথম ও প্রধান হাতিয়ার হল জন সচেতনতা। সমাজের প্রতিটি মানুষকে বোঝাতে হবে যে, মাদক আসলে মৃত্যুর সমার্থক। একজন বাচ্চা যখন বড়ো হয় তখন তার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব থাকে পরিবারের, কারণ সে পরিবারেই সবচেয়ে বেশি সময় কাটায়। বাবা – মাকে সন্তানের সঙ্গে খোলা মেলা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের মধ্যে সুস্থ স্বাভাবিক আনন্দ দায়ক পরিবেশ বজায় রাখাও একান্ত ভাবে জরুরি।
জন সচেতনতা প্রসারে সর্বাত্মক সরকারি পদক্ষেপ জরুরি। সেই সঙ্গে সবধরনের গণমাধ্যমকেও সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে। ডেনড্রাইট-এর মত নেশার দ্রব্যের কালো থাবা থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে রেডিও,(Redio) টেলিভিশন, (TELEVISION) সংবাদপত্র, (NEWSPEPAR) ইন্টারনেটের ( Internet) গঠনমূলক ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। গণ মাধ্যম সুস্থ সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে মাদক বিরোধী বার্তা খুব সহজেই পৌঁছে দিতে পারে।