শুভ চক্রবর্তী পশ্চিম মেদিনীপুর:– পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যাবার অনুমতি না দেওয়া হলেও তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, মিড ডে মিল এবং নতুন ক্লাসে ভর্তি সহ একাধিক কাজের জন্য শিক্ষকদের স্কুলে নিয়মিত যোগদানের কথা সরকারি তরফে নির্দেশ দেওয়া হলেও স্কুলমুখো হতে প্রবল অনীহা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একশ্রেণীর শিক্ষকদের। কর্তব্যে গাফিলতির জেরে ৫৩ জন প্রাথমিক শিক্ষককে শোকজ করল জেলা শিক্ষা পর্ষদ, নেওয়া হতে পারে কড়া পদক্ষেপও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিষদের এই পদক্ষেপে রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে জেলার শিক্ষামহল। প্রসঙ্গত করোণা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই রাজ্যজুড়ে ধীরে ধীরে পুনরায় ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি।
সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় শোকজের মুখে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বহু শিক্ষক
এখনো পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যাবার অনুমতি না দেওয়া হলেও তাদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া, মিগ ডে মিল এবং নতুন ক্লাসে উন্নয়ন-সংক্রান্ত সহ একাধিক কাজের জন্য শিক্ষকদের স্কুলে নিয়মিত যোগদানের কথা বলা হয়েছে সরকারি তরফে। এই মর্মে জেলা শিক্ষা পরিষদের তরফ থেকে একটি নোটিশ জারি করে জানানোও হয় চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এর পাশাপাশি সহকারি শিক্ষকদেরকেও স্কুলে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু দেখা যায় জেলাজুড়ে বেশকিছু শিক্ষক এই সরকারি নির্দেশের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একাধিক স্কুল পরিদর্শনে যান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষুই। ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন বেশ কয়েকটি স্কুলে কোনোও শিক্ষকই উপস্থিত নেই।
আবার কয়েকটি স্কুলে শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষক মহাশয় সমস্ত কাজ করছেন দেখা নেই কোনোও সহকারী শিক্ষকের। এরপরই কড়া ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হন চেয়ারম্যান। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বাবু বলেন দীর্ঘদিন ধরে সরকারি নির্দেশে স্কুল বন্ধ থাকার পর প্রচুর কাজ জমে ছিল। আগামী শিক্ষাবর্ষে যাতে স্কুল চালু করা যায় সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই চেষ্টা করছি সমস্ত কাজ গুলোকে গুছিয়ে নেওয়ার। সেই কারণেই নোটিশ জারি করা হয় সমস্ত শিক্ষককে স্কুলে থেকে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম গুলি করার জন্য। কিন্তু বারবার অভিযোগ আসছিল বেশকিছু শিক্ষক সরকারি নির্দেশে গুরুত্ব না দিয়ে এখনো ছুটি উপভোগ করতে ব্যস্ত।
এগরা সারদা শশিভূষণ কলেজে রক্তদান শিবির
বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে গিয়েও দেখি ব্যাপারটা একদমই সত্যি। কর্তব্যে গাফিলতি এবং সরকারি নির্দেশ অমান্য করার কারণে মোট ৫৩ জন শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে এবং দ্রুত তাদের শোকজের জবাব লিখিত আকারে চাওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের সমস্ত সমস্যা সমাধানে আমার অফিস যেমন তৎপর, একইভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থের দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হয়। যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতে জড়িয়ে আছে সেখানে এমন গাফিলতি কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।
শোকজের মুখে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বহু শিক্ষক
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে এই ধরনের অভিযান লাগাতার চলবে এবং কর্তব্যের প্রতি গাফিলতি দেখা গেলে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাপতি অনিমেষ দে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সহযোগিতায় এই বর্তমানে শিক্ষকদের আর কোনোও সমস্যা নেই। সরকার সমস্ত ক্ষেত্রেই তাদের পাশে আছেন। তাহলে তাদেরও উচিত নিজেদের কর্তব্য পালন করা। স্কুল খোলা হয়েছে তারা নিজের কর্তব্য দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেননা। মাননীয় চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন আমরা তার বিরোধিতা কখনোই করিনা। উনি সরজমিনে তদন্ত করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই আশা করি। তবে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের কে এই বার্তা দিতে চাই যে তারা তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে পালন করুন এবং নিয়মিত স্কুলে আসুন।