নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর : এলাকায় ধুরন্ধর হিসেবেই পরিচিত ছিল, এক সময় চিটফান্ডের এজেন্ট হয়ে গ্রামের বহু মানুষের কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে বেপাত্তা হয়েছিল বেশ কিছুদিন, তারপর সুযোগ বুঝেই শাসকদলে নাম লিখিয়ে এলাকার নেতা হতেও বেশি সময় লাগেনি। সবং এর বলপাই ন নম্বর অঞ্চলের বাসিন্দা দীপঙ্কর প্রমাণিকের এই ধরনের তথ্য মোটামুটি সকলেরই জানা ছিল। কিন্তু সামান্য সম্পত্তির জন্য নিজের বাবাকে অকুত্য অত্যাচার করে খুন করে ফেলতে পারে এমনটা ভাবতে পারেনি কেউই।
এমন কি এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায় মাস দুয়েক আগে নিজের মায়ের রহস্যজনক মৃত্যুর পিছনেও ছিল দীপঙ্করেরই হাত।যদিও তৃণমূলের দাপুটে নেতা হওয়ার কারণে ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়ায়নি। স্থানীয়দের বক্তব্য,দ্রুত সম্পত্তি হাতাতে নিজের বাবা- মা এর ওপরে চলত অকথ্য অত্যাচার ৷ লিখে দিতে হবে সমস্ত কিছু অবিলম্বে ৷ নিজের দুই ছেলে দীপঙ্কর এবং শুভঙ্করের স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল ছিলেন ছিলেন সুভাষ প্রামানিক তাই সব হারিয়ে বাড়ি ছাড়া হওয়ার ভয়ে সম্পত্তি লিখে দাতি চাননি ৷
সম্পত্তির লোভে হাত পা ভেঙেও শান্তি হয়নি
বাবা- মা কে মারধোর চলতো।গতবছর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ওপর ছোট ছেলে শুভঙ্কর চড়াও হয়ে বাবা-কে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছিল গুনধর ছেলে। তারপরও থামেনি অত্যাচার। মাস দুয়েক আগে একদিন গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার হয় দীপঙ্কর বাবু স্ত্রীর মৃতদেহ বাড়ির মধ্যে থেকে। দুই ছেলে এলাকায় প্রচার করে বাবার সাথে গন্ডগোলের জেরেই মানসিক অবস্থাতে আত্মঘাতী হয়েছে মা। এমনকি পরিকল্পনামাফিক বাবার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার করতেও ছুটে ছোট ছেলে শুভঙ্কর। দীপঙ্কর শাসকদলের বুথ সভাপতি এবং এলাকার দাপুটে নেতা হওয়ার কারণে ব্যাপারটা থানা পর্যন্ত গড়াতে দেয়নি সে যাত্রায়
READ MORE : বাংলা শান্তি চায়, হিংসা চায়না, ঝাড়গ্রামে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় বলেন সায়নী ঘোষ
এরপর হয়ত পড়ে বাবা-র পালা৷ হঠাৎ করে ই এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় সুভাষ প্রামাণিক। স্থানীয়দের সন্দেহ হওয়ায় তারা যোগাযোগ করে থানায়।প্রতিবেশী বিধান পাত্র বলেন- “একদিন রাতে ওদের বাবাকে মারধোরের বিষয়টি আমরা শুনতে পাই। তারপর থেকে ওদের বাবা নিখোঁজ, অথচ জিনিসপত্র বিক্রি বন্টন হচ্ছে দেখে সন্দেহ হয়। এরপরে আমরা খোঁজ করে জানতে পারি কোনো আত্মীয়ের বাড়িতেও ওদের বাবা নেই। এরপরই আমরা সবং থানায় জানাই। আমাদের সন্দেহ আরো দৃঢ় হয় যখন দেখি বাড়িতে থাকা বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করছে একের পর এক।
খুন করে বাড়ির সেফটিক ট্যাঙ্কে ফেলেদিল ছেলেরা!
পরিশেষে আসরে নামে পুলিশ স্বপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ বড়ছেলের বাড়ির সেফটিক ট্যাঙ্ক থেকে বৃদ্ধের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে সোমবার সন্ধ্যার মুখে৷ ভয়াবহ নৃশংসতায় হতভম্ভ স্থানীয়রা৷ পুলিশ তদন্ত দেন আমার পর থেকেই ফেরার বড়ো ছেলে দীপঙ্কর৷ নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় ছোট ছেলে শুভঙ্কর। নিজেই কান্নাকাটি করে বলতে থাকে বাবার জন্যই আজ আমরা প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি কিন্তু কিভাবে বাবার মৃত্যু হল কে বা আমাকে এই অবস্থায় ফেলে গেল বুঝতে পারছি না। দোষীদের যেন পুলিশ চরম শাস্তি দেয়।
অন্যদিকে পুলিশ প্রাথমিক সন্দেহের কারণে মৃত ব্যাক্তির ছোট ছেলে,দুই বৌমা সহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে সবং থানার পুলিশ। তদন্ত শুরু করার পরেই সোমবার গভীর রাতে মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে দীপঙ্করকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে মহাড় থেকে। নিহত সুভাষ পরামানিকের ভাই চন্দন পরামানিক চন্দনের স্ত্রী গৌরী প্রামানিক দীপঙ্করের বড় ছেলে সুদীপ ছোট ছেলে শুভঙ্কর এবং তার স্ত্রী নীলিমার বিরুদ্ধে ফোনে ষড়যন্ত্র অপরাধের প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা খুনসহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে। আজ ধৃতদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মূল অভিযুক্তদের ৩দিনের পুলিশি হেফাজত এবং বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে নির্দেশ দেন।