বাঁকুড়া: একটা সময় ছিল যখন সন্ধ্যা নামলেই শিল্পীসত্তার ভিন্ন সুরে মুখরিত হয়ে উঠত লালমাটির গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপ গুলি। জোর কদমে চলত লোকসংস্কৃতির টুসু, ভাদু, ঝুমুরের রেওয়াজ। সেসব দিন আজ অতীত। প্রবাহমান কাল চক্রের আবর্তনে বদলেছে সময়, বদলেছে সমাজ- সংস্কৃতি।
গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দ্রুত কমেছে রেওয়াজ। প্রতিযোগিতার দৌড়ে টুসু,ভাদু এখন অনেকটাই ব্যাকডেটেড কালচার। তবুও রাঢ় বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম ধারা টুসু গান আজও টিকে বাঁকুড়ার গ্রাম-গঞ্জে। আজও পৌষের ঠান্ডার সন্ধ্যায় কান পাতলে ভেসে আসে কোরাসে টুসু গানের মেঠো সুর। মাঠের ধান ঘরে উঠলে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোতে সমৃদ্ধির পরব টুসু পালিত হয়।প্রযুক্তির আড়ালে ঢাকা
প্রযুক্তির আড়ালে ঢাকা পড়ছে বাঁকুড়ার লোকসংস্কৃতির টুসু-ভাদু-ঝুমুর
অনেকের মতে টুসু আসলে মা লক্ষ্মীর লৌকিক রূপ। লৌকিক দেবী, তাই তাঁর আরাধনায় আড়ম্বরের তুলনায় আচারের প্রভাব বেশি। গোটা পৌষ মাস জুড়ে প্রতি সন্ধেয় পোড়ামাটির তৈরী বিশেষ ধরনের টুসু – খোলা মূলত গাঁদা ফুল দিয়ে সাজিয়ে তার চারিদিকে বসে গানের মাধ্যমে টুসুর আরাধনা করা হয়। প্রাসাদ হিসেবে দেওয়া হয় মুড়ি,বাতাসা,খই, মোয়া, মুড়কি । সেইসঙ্গে ঝুমুর সুরে স্থানীয় ভাষায় শব্দের পর শব্দ বসিয়ে তৈরি হয় গান। যুগে যুগে নানা সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা মিশে যায় গানে।
READ MORE : নষ্ট করা হচ্ছে ঐতিহাসিক স্মৃতি, নীলকুঠিকে ফের পর্যটন কেন্দ্র করার দাবিতে স্থানীয়রা
গানের মধ্যে ফুটে উঠে দৈনন্দিন জীবনের সুখ, দুঃখ,অভাব অভিযোগের নানা কথা। আর সেইসব গান, সুর মহিলাদের মুখে মুখে এক প্রজন্ম থেকে সঞ্চারিত হয় আরেক প্রজন্মে। এখন গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপ ছেড়ে ইন্টারনেট ,সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত দুনিয়া। মুখ থুবরে পড়েছে বাঁকুড়ার লোকসংস্কৃতির টুসু, ভাদু ঝুমুর নৃত্য। যেটুকু অবশিষ্ট ছিল তারও ভবিষ্যত যেন অন্ধকারে সারকারী সাহায্যের অভাবে। সরকার যদি এই লোকসংস্কৃতির দিকে নজর না দেয় তাহলে হারিয়ে যাবে বাংলার ঐতিহ্য বাঁকুড়ার টুসু-ভাদু, ঝুমুর। তাদের বোলে- “আইলো সখি যাবি যদি বাঁকুড়ার বাজারে একা একা টুসু আমার যাবেক কি করে ?” লোককবি কৃষ্ণ দুলাল চট্টোপাধ্যায় বলেন যে ,লোক সংস্কৃতির পীঠস্থান রূপেই বহুল প্রচলিত বাঁকুড়া।