Monday, November 11, 2024
- Advertisment -spot_img

নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে বাঘ কেন বার বার নগর কুলে আসছে?

দঃ ২৪ পরগনা: মৈপিট এবং কেল্লায় আসা বাঘকে নিয়ে রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পরিসমাপ্তি ঘটলেও লাহিড়িপুরের দাপুটে কান্ড সঙ্গে কুমিরমারি’র বাগনা অফিস সংলগ্ন পুকুরপাড়ে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুম- ঘটনাক্রমসমূহকে নিয়ে কিন্তু রয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু প্রশ্ন। জন্ম থেকে প্রতিরোধহীন জীবনে অভ্যস্ত বাঘ কেন নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে বার বার লোকালয়ে আসছে। যদিও আমার মতো ‘বাঘ অনভিজ্ঞ’ সুন্দরবন প্রেমির এ আলোচনা একান্ত গুরুত্বহীন। তবুও পরিস্থিতির সাপেক্ষে কয়েকটি কথা না বলে পারছি না।

আরও খবর: গোবরডাঙা থানা ও মছলন্দপুর তদন্ত কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ পালন

কোন পরিস্থিতিতে জঙ্গলরাজ নিজস্ব নিরাপদ আশ্রয় ত্যাগ করে নগরকূলে আসে, আমার অনুমিত সম্ভাব্য কারণগুলো হলো- ১) খাদ্য সংকট হলে, ২) কোন বাঘার যৌন আসক্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাঘিনী নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করার জন্য, ৩) পুরুষ বাঘ পৈশাচিক প্রবৃত্তিতে শৈশব না পেরনো পুরুষ বাচ্চাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে ভবিষ্যতের ‘যৌন’ প্রতিযোগীকে বিনাশ করতে। ফলে অভিজ্ঞ গর্ভবতী বাঘিনী প্রসবের পূর্বে সন্তানের নিরাপত্তার জন্য যথাসম্ভব নিরাপদ আশ্রয় অনুমানে নগরকূলের কাছাকাছি চলে আসে, ৪) বয়স্ক এবং অসুস্থ বাঘ সহজ সুযোগে মানুষ-গরু-ছাগল শিকার করার জন্য নগরকুলের কাছাকাছি চলে আসে এবং সুযোগ বুঝে পার হয় নগরকূলে, ৫) জলরাশির পারে নদীবাঁধের ধাপায় জন্মানো লবণাম্বু অঞ্চলকে বনাঞ্চল অনুমানে ভুল করে চলে আসে নগরকুলে, ৬) হরিণ বা শুকর পর্যাপ্ত থাকা সত্বেয় বাঘ শিকার ধরতে না পারা(যথেষ্ট কারণ আছে), ৭) (পুরুষ বাঘেদের ক্ষেত্র)এলাকা দখলের লড়াইয়ের ফলে পরাজিতরা বৈরাগ্য নিয়ে চলে আসে এপারে। এছাড়া আরো উপযুক্ত কারণও হয়তো আছে।

নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে বাঘ কেন বার বার নগর কুলে আসছে?

প্রতিকারের জন্য নাইলন জালের ব্যবহার তো আছে সঙ্গে মুখ্যত খাদ্য সংকটের কথা বলি, সুন্দরবনে বাস করা বাঘের তুলনায় হরিণ এবং শুকরের সংখ্যা যা তাতে করে খাদ্য সংকট হওয়ার কথা নয়। সুন্দরবনের বাঘ দৌড়ে শিকারে অনভ্যস্ত কৌশলই একমাত্র ভরসা। বাঘের ঘ্রাণশক্তি দুর্বল কিন্তু শ্রবণ এবং দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত প্রখর। চলার পথে ঝোপঝাড়ে আত্মগোপন করে এক’দু লাফের মধ্যে শিকার এলে মেলে স্বার্থকথা। দৈহিক গঠনের জন্য যে নিবিড়তায় সাবলীলভাবে হরিণ প্রবেশ করতে পারে সেখানে বাঘ অনিবার্যভাবে আটকে যায়। ফলে জঙ্গল অভ্যন্তরের নিবিড়তায় শিকার করা অসম্ভব।

বর্তমানে বেড়জাল এবং জগৎ বেড়জালিদের করায়ত্বে অধিকাংশ বালিয়াড়ি সৈকতসহ খালখাঁড়ি। ফলে হরিণ-শুকর সৈকত চারণা এবং খালখাঁড়ির ধাপায় জমে থাকা ‘ভাসা’ খাওয়ার লোভ ভুলে আস্তানা গেড়েছে জঙ্গল গভীরে। ফলে প্রখর ঘ্রাণশক্তির অধিকারী হরিণ সহজেই ধোঁকা দেয় ক্ষুধার্ত বাঘকে। মাছ, কাঁকড়া এবং ভ্রামনি বোটসমূহের বিকট শব্দ এবং পর্যটকদের হই হুল্লোড় কেবল শব্দদূষণ করে ক্ষান্ত হয় না সঙ্গে অভুক্ত বাঘেদের শিকার করাতেও ব্যাঘাত ঘটায়।

ফলে দীর্ঘ হতে থাকে অভুক্ততার সিঁড়ি। আমার মনে হয়, জীবনরেখার ধার ঘেঁসে অবস্থান করা জঙ্গলগুলোর অভ্যন্তরে যদি বড় মাপের পুকুর খনন করে সেই মাটি দিয়ে তৈরি চওড়া পাড়ে জন্মানো ঘাস এবং মিষ্টি(পান যোগ্য) জলের সন্ধানে প্রতিনিয়ত ভিড় জমাবে দল দল হরিণ এবং শুকর। নিবিড়তার আড়ালে আত্মগোপন করে থাকা বয়স্ক, অসুস্থ এবং বিবাগী বাঘ-বাঘিনীরা সহজেই শিকারের মাধ্যমে শেষের কটা দিন বাঁচতে পারে। মনে রাখতে হবে, এই পুকুর কেবল মাত্র বন্যদের জন্য।

অনধিকার প্রবেশের ক্ষেত্রে জঙ্গুলেদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। খালখাঁড়ি পার হয়ে নগরকূলে এসে ধরপাকড়, ক্ষেত্রবিশেষে গণপিটুনি, খিদের জ্বালায় খাঁচাবন্দি হয়ে কিংবা গোলাগুলি হজম করে দূর দুরান্তে দ্বীপান্তরের বাসিন্দা হয়ে শেষের দিনগুলো কাটাতে না চেয়ে হয়তোবা নগরকূল অভিযানে নাও আসতে পারে।

RELATED ARTICLES

कोई जवाब दें

कृपया अपनी टिप्पणी दर्ज करें!
कृपया अपना नाम यहाँ दर्ज करें

spot_img

Most Popular

Recent Comments