জঙ্গলমহল বার্তা ডেস্ক:-
গত ২৬মে, শুক্রবার ইয়াসের তান্ডবের ফলবশত ভেসে গিয়েছে মাইলের পর মাইল গ্রাম, ঘর হারিয়েছেন প্রচুর মানুষজন। এখন তাদের বাড়ি ঘর গুলির চিত্র দেখলে সেগুলিকে ধ্বংস-স্তুপ বললেও কম হিসেবে ব্যাখ্যায়িত করা হবে। সেই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আজ আকাশ পথের মাধ্যমে ঘুরে দেখেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষত পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই চব্বিশ পরগনার বিধ্বস্ত এলাকা গুলি আজ তিনি পরিদর্শন করেন।এরপরই তিনি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কলাইকুন্ডায় বিশেষ বৈঠকে যোগদান করবেন বলে শোনা গেলেও শেষপর্যন্ত তিনি থাকছেন না বলেই জানা যায়। নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্যই মনে করা হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে যোগদানে আপত্তি জানিয়েছেন। তবে ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা করে ১৫ মিনিটের বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে তিনি আবারও ফিরে আসেন দীঘা উন্নয়ন পর্ষদে এবং সেখানে তিনি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সহ ঝড়ের ফলে হওয়া সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বৈঠকে বসেন।
এদিন বৈঠকে জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এবং প্রায় ১ কোটি মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই ইয়াসের তান্ডব লীলায় এবং সেই বৈঠক থেকেই তিনি সরাসরি এও জানান, বিধ্বস্ত দীঘায় নতুন করে সৌন্দর্যের কাজ করতে হবে। দীঘা উন্নয়ন পর্ষদের দ্বায়িত্ব আলাপন বন্দোপাধ্যায় কে দেওয়া হয় ওইদিনই। এই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা সামলানোর জন্য একজন দক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির এই দ্বায়িত্ব থাকা প্রয়োজন, তাই তিনি আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় কেই এই বিশেষ দায়িত্বের অধিকারী হিসেবে মনে করে এই গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেন। তিনি বৈঠক থেকে একের পর এক কাজের কথা বলতে থাকেন। যাতে বিপর্যয়ের শেষে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘদিন বিপর্যয়ের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে থাকতে না হয়। গ্রামের রাস্তা গুলিকে দ্রুত মেরামত করতে হবে । এই কাজ পথশ্রী প্রকল্পের মধ্যেই ঢুকিয়ে নিতে হবে বলে ঘোষণায় বলেন তিনি। অপরদিকে টিউবওয়েলে নােনাজল ঢুকেছে , পানীয় জলের বন্দোবস্ত যাতে দ্রুত করা যায় এই সকল বিষয় গুলির দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নতুন করে টিউবওয়েল বসানাের নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী । তাছাড়া ত্রাণের আবেদনের রিভিউ হবে আগামী ৩ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত। দুয়ারে ত্রাণ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন রাজ্য সরকার। ওই তারিখের মধ্যে ত্রাণের আবেদন জমা দিতে হবে । ক্ষোভ জানাতে হবে যদি সঠিকভাবে কাজ না হওয়ায়। ১৯ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ত্রাণের আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হবে । সমীক্ষা করে দেখা হবে ত্রাণের টাকার অপব্যবহার করা হচ্ছে কি না । তিনি আরও বলেন , “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির রিপাের্ট দিয়ে এসেছি । তবে আমাকে দিঘায় আসতে হত , তাই বৈঠকে থাকতে পারিনি । উনি আমাকে বৈঠকে ডেকেছিলেন । তাই ওঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছি । জানিয়ে এসেছি , দিঘায় আসতে হবে তাই বৈঠকে থাকতে পারছি না । তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিঘা সৈকত উন্নয়নের জন্য ১০ হাজার কোটি এবং সবমিলিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ চেয়েছি । তবে তা পাবাে কি জানি না তবে প্রধানমন্ত্রীকে বলে এসেছি ।” এরপরই তিনি জানান যে আগামীকাল তিনি নন্দীগ্রাম, খেজুরী, দীঘার নানান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গুলি পরিদর্শন করবেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীকালে বিধ্বস্ত এলাকা গুলির জন্য রাজ্য সরকারকে কিভাবে সাহায্য করবেন কিংবা উপকূলবর্তী এলাকার জন্য কিভাবে ত্রাণের ব্যবস্থা করবেন কিংবা আদৌ করবেন কিনা? সে বিষয়েও এখনও একপ্রকার ধোঁয়াশা দেখা যাচ্ছে। তবে একদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রাণ থেকে কাউকে যাতে বঞ্চিত না করা হয়, সেবিষয়ে বারংবার নজরদারি করতে বলেছেন। ত্রাণ বন্টনের গাফিলতি এবার একদমই বরদাস্ত করবে না রাজ্য সরকার, সেই দিন সভা থেকেই সাফ জানিয়ে দেন তিনি।