স্টাফ রিপোর্টার, ঝাড়গ্রাম: এবার একের পর এক বিজেপি নেতৃত্বের দলবদলের ঘটনায়, ধীরে ধীরে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছে পশ্চিবঙ্গের ভারতীয় জনতা পার্টি। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জগন্নাথ সরকার এবং নিশীথ প্রামাণিকের মত দু’জন হেভিওয়েট এর দলত্যাগের পর এবার মাসের শেষে দল থেকে বেরিয়ে আসলেন ঝাড়গ্রামের দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা। ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির অন্যতম মুখ তথা জেলার সহ সভাপতি উৎপল দাস মহাপাত্রও এবার বেসুরো দলের বিষয়ে।
সোমবার দলের ঝাড়্গ্রাম জেলা সভাপতি তুফান মাহাতোকে লিখিতভাবে দল ছাড়া কথা জানিয়ে চিঠি দিয়ে বিজেপি দল ছাড়লেন বিজেপি দলের ঝাড়্গ্রাম জেলা কমিটির সহ সভাপতি উৎপল দাস মহাপাত্র। তার কথায় দলের গতিবিধিতে বেশ কিছু অযাচিত পরিবর্তন তাকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন ভারতীয় জনতা পার্টির শুদ্ধিকরণ বহু আগে প্রয়োজন ছিল,কিন্তু তা হয়নি, এবং ভবিষ্যতে হবে বলেও মনে হয়না। বিশেষ করে ঝাড়গ্রাম জেলায় দীর্ঘদিন স্বজনপোষণ এবং লবিবাজির ফল আজ দলের বহুদিনের কর্মীদের পেতে হচ্ছে। এই বিরূপ এবং অনৈতিক আচরণ এর ফলাফল ভোটের সময় জনতা হতে নাতে দিয়েছেন বলেও মত বহু পুরাতন কর্মীর। দলের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ ভালো না থাকার প্রভাব পড়েছে ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে। ঝাড়গ্রামের ৪ টি আসনেই চূড়ান্ত হারের সম্মুখীন হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। খোদ বিজেপির রাজ্য সভাপতির নিজের জেলায় ভোটের এহেন ফলাফল ভাঁজ ফেলেছে রাজ্য বিজেপির ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বদের কপালে।
“অনেক আগেই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলাম,কিন্তু দেরিতে হলেও সোমবার পদত্যাগ করলাম, সেই সাথে দলত্যাগও করলাম। ব্যক্তিগত স্তরে মানুষের ভালোর জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করে যাব।” তারই সাথে কিছুটা বেদনার সুরেই তিনি জানান যে তার সাথে বিজেপি দলের আর কোন সম্পর্ক রইল না। এই ঘটনায় জল্পনা বাড়ছে অন্য এক সম্ভাবনা নিয়েও। এই দলবদলের পিছনে কি অন্য দলের সাথে আদর্শগত মিলও দায়ী? এবার কি দলত্যাগী থেকে দলবদলুর তকমা পাবেন উৎপল দাস মহাপাত্র? যদিও অন্য কোন দলে যোগ দেবেন কিনা তা তিনি নিজে পরিষ্কার করে জানান নি। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির প্রভাবশালী নেতা বিজেপি দল ছেড়ে দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করায় ঝাড়্গ্রাম জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। উল্লেখ করা যায় যে, নয়া গ্রামে বিজেপির কে শক্তিশালী করে তোলার জন্য উৎপল দাস মহাপাত্রের অবদান বিজেপি কর্মীরা কেউ ভুলে যাবে না । তাই উৎপল দাস মহাপাত্র দল ছেড়ে দেওয়ায় নয়াগ্রামের বিজেপি কর্মীরা বেশ হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এরই সাথে সোমবার রাতে ঝাড়গ্রাম জেলা ভারতীয় জনতা পার্টির আই.টি. সেলের সদস্য তথা নয়াগ্রাম বিধানসভা কো-কনভেনার প্রতীক পড়িয়াল এর মুখে দলের বিষয়ে বেশ কিছুটা নেতিবাচক সুর শোনা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও আপলোড করে তিনি দলের হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাজ না করার কথা জানান। তার এরূপ সিদ্ধান্তের পিছনে ঠিক কি কারণ তা কিন্তু জানা যায়নি এখনো। যদিও উৎপল দাস মাহাতোর মতোই স্বজনপোষণের কথা উঠে আসে প্রতীক পরিওয়ালের মন্তব্যেও। এইসব একের পর এক ঘটনায়, বিজেপির ভীত নড়বড়ে হওয়ার আশঙ্কা কিন্তু ঝেড়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। ঠিক কোন কোন ব্যক্তির অনৈতিক পদক্ষেপ কাদের উপস্থিতি এবং কোন অভ্যন্তরীণ বিবাদ বারংবার রাজ্য বিজেপির নানান পুরাতন সদস্যের দল ত্যাগের কারণ হচ্ছে তা এখনো অনেকটাই অস্পষ্ট।
তবে, ঝাড়্গ্রাম জেলার বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অবনী কুমার ঘোষ বলেন, তারা এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে কিছুই জানেন না। এমনকি দলের অভ্যন্তরে এই বিষয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। তিনি আরও বলেন, হয়তো হোয়াটসঅ্যাপে উৎপল দাস এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করে থাকতে পারে, কিন্তু সরাসরি তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি। তাই এখনই তিনি উৎপল দাস মহাপাত্রের দলত্যাগ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে নারাজ।
তৃণমূল নেত্রী রেখা সরেন এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, কোন শুভবুদ্ধি ব্যক্তিত্ব বিজেপি দলটি করতে পারেননা। বর্তমানে উৎপল দাস যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভবিষ্যতে আরো অনেক বিজেপি নেতা একই সিদ্ধান্ত নেবেন বলেই তার মত। কেন্দ্র এবং রাজ্যে বিজেপি দলটির কার্যকলাপে তাদের দলীয় নেতারাই সন্তুষ্ট নয় বলে অভিযোগ করেন রেখা সরেন।
সব খবর সবার আগে দেখার জন্য শুধুমাত্র চোখ রাখুন জঙ্গলমহল বার্তার ফেসবুক পেজে। এখন আপনার ফোনের মুখেই আমাদের ওয়েবসাইট টাইপ করুন, WWW.JANGALMAHALBARTA.IN (এছাড়াও আমাদের দেখতে পাবেন ইউটিউব এ )